আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি
পার্বতীপুর-রাজশাহীগামী ট্রেন
চালক সংকট দেখিয়ে উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন ১৫ মাস বন্ধ
চালক সংকটের কারণ দেখিয়ে দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে বন্ধ পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এটি পার্বতীপুর ইয়ার্ডের তিন নম্বর লাইনে ফেলে রাখা হয়েছে। রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা এ ট্রেনটি বগুড়ার সান্তাহার, নাটোর ও আব্দুলপুর হয়ে রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছে। ট্রেনটিতে ওইসব এলাকার কর্মরত যাত্রীরা সহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বহন কাজে যাতায়ত করত। সেটি এখন না পারায় এটি চালুর জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গেছে, উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে আসা রাজশাহীগামী ৩২ নম্বর আসা-যাওয়া ২০২৩ সালের ২৮ জুলাই থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এটি পার্বতীপুর রেল স্টেশন থেকে রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে এসে বগুড়ার সান্তাহার, নাটোর ও আব্দুলপুর হয়ে সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছে। আবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী থেকে ছেড়ে এসে রাত ৮টা ৫ মিনিটে পার্বতীপুর রেল স্টেশনে পৌঁছে। প্রতিটি স্টেশনে ট্রেনটি যাত্রা বিরতীর কারণে সাধারণ মানুষ খুব উপকৃত হতো। উত্তরা মেইল ট্রেনের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের কাঁচামাল, আত্রাই থেকে মাছ ও সান্তাহারের বিখ্যাত মাদুরসহ বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য বহন করা হতো। এতে ব্যয় কম হওয়ায় আর্থিকভাবে লাভবান হতো সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে সেটা সম্ভব হচ্ছে না। মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনটি।
আরো জানা গেছে, এই ট্রেনে ৫টি যাত্রীবাহী কোচ ও একটি লাগেজ ভ্যান ছিল। এ ছাড়া ছোট-বড় সব স্টেশনে থামে এটি। ফলে যাত্রীরা এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশনে অল্প খরচে যাতায়াত করতে পারত। ভোরে পার্বতীপুর থেকে এই ট্রেনটি ছাড়ায় এটি ছিল কর্মজীবী মানুষদের পছন্দের বাহন। এই ট্রেনে বগুড়ার সান্তাহার, নওগাঁর আহসানগঞ্জ, নাটোর, আব্দুলপুর এলাকায় কর্মরত যাত্রীরা বেশি চলাচল করতেন। এটি সকালে হওয়ার কারণে অনেকেই রাজশাহীতে চিকিৎসার জন্য আসত উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেনে। ট্রেনটি পার্বতীপুর থেকে ছাড়ার পরে জয়পুরহাট পৌঁছানো মাত্র যাত্রীতে ভর্তি হয়ে যেত। এটির কোচের সিট ক্যাপাসিটির বেশি যাত্রী পরিবহন করা হতো।
এ বিষয়ে সান্তাহারের মাছ ব্যবসায়ী আবদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে উত্তরাঞ্চলে মাছের ব্যবসা করে আসছি। ট্রেনটিতে সকালে আত্রাই গিয়ে মাছ ক্রয় করে সান্তাহার এলাকায় বিক্রি করি। কিন্তু এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়েছে।
সান্তাহার রেল স্টেশনের কুলির সরদার আলম সরদার বলেন, এটি বন্ধ হয়ে যাওয়া আমাদের পাশাপাশি অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা বন্ধ করে বসে আছেন। সান্তাহারের চা বাগান এলাকার বাদাম বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার বৃদ্ধ মা, স্ত্রী, দুই সন্তানসহ ৫ সদস্যের পরিবার। আমি উত্তরা ট্রেনে হকারি করে ৫ সদস্যের সংসার চালায়। প্রায় ১৫ মাস ট্রেন বন্ধ থাকায় ব্যবসা বন্ধ রয়েছে।
সান্তাহার দমদমা গ্রামের হোসেন আলী বলেন, সান্তাহার থেকে আন্তঃনগর ট্রেনে রাজশাহী যেতে ভাড়া লাগে ১২৫ টাকা। উত্তরা ট্রেনে যেতে লাগতো মাত্র ৪৫ টাকা। গরীব মানুষদের উত্তরা ট্রেনে বন্ধ হওয়ায় অনেক অসুবিধায় পড়তে হয়েছে।
ওই ট্রেনের একজন টিকিট চেকার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ট্রেনটিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষেরা বেশি যাওয়া আসা করত। সব স্টেশনে থামার কারণে সবসময় যাত্রী ভর্তি থাকতো কোচগুলো। যা এখন আর চোখে পড়ে না।
সান্তাহার স্টেশন মাস্টার খাতিজা খাতুন বলেন, চালক সংকটের কারণে উত্তরা মেইল ট্রেনটি গত ২৮ জুলাই থেকে বন্ধ করে দেয়া হয়। এটি বন্ধ হওয়ায় স্থানীয়রা দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে শুনছি বেসরকারি পর্যায়ে চালু হবে আবার।
বাংলাদেশ রেলওয়ে, রাজশাহী, মহাব্যবস্থাপক (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদার মুঠোফনে জানান, বিশেষ একটা পরিস্থিতিতে ট্রেনটি বন্ধ করা হয়েছিল। এটি আগামী মাসের মধ্যে চালু করতে পারবো বলে আশা করছি।
বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল (রাজশাহী)’র চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মোহাম্মদ আহসান উল্লাহ ভুঁঞা বলেন, চালক সংকটের কারণে ট্রেনটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।